স্টাফ রিপোর্টার: লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফের বিরুদ্ধে তারই সহকারী ডাক্তার উম্মে জয়নব পিয়ালের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। কর্মের সুবাদে হাসপাতালের একই কক্ষে অবস্থান করতেন দুজন। দীর্ঘদিন একইসাথে থেকে গড়ে তোলেন সম্পর্ক। মোবাইল এবং ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে আদান-প্রদান হতো কথোপকথন। এমনটি অভিযোগ করেন ডা. সাইফুল ইসলামের পরকীয়া বান্ধবীর স্বামী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তামিম মুনতাসির। এবিষয়ে তিনি গত ১৯ মার্চ লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলি অঞ্চল রায়পুর আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের প্রতি সমন জারি করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ভুক্তভোগী ডা. তামিম মুনতাসির ২০১৯ সালে ডা. উম্মে পিয়ালকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এরই মধ্যে হঠাৎ উম্মে পিয়ালের উশৃঙ্খলতা বেড়ে যায় এবং সংসার, স্বামী ও সন্তানের প্রতি প্রায় উদাসিন থাকতেন। বিষয়টি পিয়ালের মা-বাবা সহ পারিবারিকভাবে মিমাংসের চেষ্টা করে ডা. তামিম। কিন্তু মিমাংসা না করে উল্টো পিয়াল ও তার পরিবার ডা. তামিমকে সন্ত্রাসী দিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া, নারী-শিশু আদালতে মামলা করা, চাকুরিচ্যুত করা ও হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়। এঘটনায় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কোর্ট জিডি করেন ডা. তামিম। এতে আরো ক্ষীপ্ত হয়ে সদরের সার্জন ডা. সাইফুলের সাথে গোপনে আড্ডা বাড়িয়ে দেয় পিয়াল। বিষয়টি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতে বৈঠক হয়। বৈঠকের মাধ্যমে ডা. সাইফুল ইসলামকে ওটিতে না ডাকার ব্যাপারে সতর্ক করা হয় এবং তার সহকারী ডা. পিয়ালকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়। এতেও ক্ষীপ্ত হয় ডা. পিয়াল। উক্ত বৈঠকে ডা. সাইফুল ডা. তামিমকে দেখে নেবেন বলে হুমকি প্রদান করেন এবং ডা. পিয়াল ডা. তামিমকে ডিভোর্স দেয়ার হুমকি দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ডা. তামিমকে তালাকপত্র পাঠায় এবং কোন প্রকার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে নিজে বিষপানে আত্মহত্যা এবং কন্যা সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে ডা. তামিম বলেন, ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ আমার সংসার ধ্বংস করেছে। আমার স্ত্রীকে ভূলবাল বুঝিয়ে তার সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এসব নজরে পড়লে বারাংবার উনাকে সতর্ক করি। উনি আমার কোন কথা কর্ণপাত করেননি বরং উল্টো উনি বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিতেন। উনি ওটি করবে বলে কৌশলে আমার স্ত্রী ডা. পিয়ালকে ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে তার প্রাইভেট চেম্বারে ডেকে নিতেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতেন। ডা. সাইফুল ইচ্ছে করেই রাত ১০টার পর ওটি শুরু করতেন।
ডা. তামিম আরো বলেন, এই দুশ্চরিত্র, লম্পট ডা. সাইফুল আমার সাজানো সংসার ধ্বংস করেছে। আমার নিস্পাপ মেয়েকে পিতৃহারা করেছে। আমি ডা. সাইফুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযত কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করতেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আনেস্থেসিয়া ডাক্তার ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে ওটিতে কাজ করার সময় বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি বলেন, ডা. সাইফুল ইচ্ছা করে দেরি করে অপারেশন শুরু করতেন। তিনি ওটি টেবিলে রোগী শোয়াই রেখে তার সহকারির সাথে গল্প করতেন। এভাবেই এই ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে দিনের পর দিন ওটি করার নামে পরকীয়া চালিয়ে যাচ্ছেন ডা. সাইফুল।
উল্লেখ যে, সদরের সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ সাধারণ মানুষদের ঠিকমত চিকিৎসা দিতেন না। নিয়মিত অফিসও করতেন না। অনেক সময় তার সহকারী উম্মে জয়নব পিয়াল তথা ডা. তামিমের স্ত্রীকে দিয়ে রোগীর চিকিৎসা দিতেন। অথচ তিনি ছিলেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ সহ সরকারী খরচে সদরে সকল ধরণের অপারেশন হয়। অথচ সদরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তিনি অপারেশন করাতেন প্রাইভেট হাসপাতালে। তবে দু-একটা সদরে করলেও বাইর থেকে সার্জারী সরঞ্জামাদী কিনতে হতো রোগীদের। প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনে সরঞ্জামাদীর বিশাল তালিকা লিখে দিতো ডা. সাইফুল ইসলাম নিয়ন্ত্রিত নার্সরা। পরবর্তীতে ড্রেসিং করতেও টাকা লাগতো। দালালদের দিয়ে সদরের রোগী পাঠাতেন প্রাইভেট হাসপাতালে। শুধুই তাই-নয় রোগীদের সাথে করতেন গোমরাহী আচারণ। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী বিপাকে পড়তেন।
অভিযোগের বিষয় ডাক্তার সাইফুল ইসলাম শরীফ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এমন ষড়যন্ত্র। এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে সত্য কখনো চাপা থাকবে না।
তিনি বলেন, পিয়াল কেন, মহিলা আরো ডাক্তারও তো আছেন, যারা আমার সাথে ওটিতে কাজ করেন। তাদের তো এমন কোন অভিযোগ নেই।