স্টাফ রিপোর্টার: লক্ষ্মীপুরের একটি মসজিদের জমি বেদখল হয়ে আছে। মসজিদের জমিতে খোদ সাধারণ সম্পাদক মার্কেট নির্মাণ করেছেন। নিজের ছেলের নামে দখল কিনে নিয়ে নাতির নামে মার্কেট করেছেন। যদিও সাইনবোর্ডে প্রোপাইটার তিনি নিজেই। তবে স্বীকার করেছেন মসজিদের সম্পদ এটি। এতে পৌর এলাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটেরপুল এলাকার কৌরশ হাজী জামে মসজিদের সাধারণ মুসুল্লিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিক্ষুব্ধরা বলছেন, রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় আছে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। দীর্ঘদিনের সংকটকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছে একটি পক্ষ। মসজিদ কমিটি মসজিদের নামে যতটুকু জমি দাবি করে আসছে, সবটুকু জমির মালিকানা মসজিদের নেই। একটি পক্ষ মসজিদকে সামনে রেখে এলাকার মানুষের জমি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। মসজিদের নাম দিয়ে ওইসব ব্যক্তিরাই সুবিধা নিচ্ছে। তবে সাধারণ মুসুল্লিরা চাচ্ছেন মসজিদকে বিতর্কের উর্ধ্বে রেখে সংকট নিরসনের।
মসজিদের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তিনি জেলার একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। নিরীহ লোকজনের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত আবুল কাশেম জানান, মসজিদের সম্পত্তির মোতওয়াল্লীর দায়িত্বে আছেন তিনি। নিজেকে এলাকার প্রভাবশালী দাবি করে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন বলেও সাংবাদিকদের হুশিয়ারি দেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মসজিদের নামে এক একর ৬৩ শতাংশ জমি আরএস খতিয়ানে রেকর্ডভূক্ত আছে। কিন্তু মসজিদের সে পরিমাণে দখলে নেই। ওই জমিতে থাকা পুকুর, বসতবাড়ি, ফসলি জমি বেদখল হয়ে আছে। যে যেভাবে পেরেছে দখল করে নিয়ছেন। এ নিয়ে গত ৩০ বছর থেকে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম একই তথ্য জানালেও তিনি নিজেই গত তিন বছর আগে মসজিদের পশ্চিম পাশে ইটেরপুল খালের মাথায় মসজিদের জমি ব্যক্তিগতভাবে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে আছেন। যার নাম দিয়েছেন সিয়াম সুপার মার্কেট। প্রোপাইটর হিসেবে তার নিজের নাম লেখা রয়েছে।
এ ব্যাপারে আবুল কাশেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদের ওই জমি জনৈক ব্যক্তি দখল করেছেন। আমার ছেলে তার কাছ থেকে আমার নাতির নামে দখল স্বত্ব কিনে নিয়েছে। সে দখল স্বত্বের ভিত্তিতে আমি সেখানে মার্কেট নির্মাণ করেছি। মার্কেটের নীচের ভূমি মসজিদের। আমরা শুধু ভবনের মালিক।
মার্কেটের একটি দোকানঘর তিনি নিজে ব্যবহার করেছেন, অন্যটি বাহাউদ্দিন রাব্বি নামের একজনের কাছে ভাড়াচুক্তি করে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
তবে ওই ভাড়াটিয়া মসজিদকে মাসিক দুইশ টাকা করে ভাড়া পরিশোধ করার দাবি করলেও স্থানীয়রা তার দাবিকে মিথ্যা বলে জানিয়েছেন।
বাসিন্দারা বলেন, মসজিদের জমি দখল করে মার্কেট করেছেন আবুল কাশেম। সেখান থেকে একটি দোকানঘর দখলে নিয়েছেন সাবেক সেনা সদস্য বাহাউদ্দিন রাব্বি। তিনিও মসজিদ কমিটির সদস্য। এরাই মসজিদকে সামনে রেখে সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। গত তিন বছর ধরে তিনি মসজিদের নামে কোন ভাড়া পরিশোধ করেননি তিনি।
এভাবে মসজিদের জমি দখল সূত্রে ক্রয় করা বা মার্কেট নির্মাণ করা য়ায় কিনা, জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বলেন, আমি মসজিদের মোতওয়াল্লী, আমি যা ইচ্ছে করতে পারি। ৩০ বছর থেকে মসজিদের জমি নিয়ে মামলা চলছে। আমি সব খরচ চালাই। এ এলাকার মানুষের সালিশ দরবার আমি করি। আর আপনারা (সাংবাদিক) এসেছেন আমার বিরুদ্ধে তথ্য নিতে? এক পর্যায়ে তিনি স্থানীয় অভিযোগকারীদের নাম জানতে চান এবং তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এসময় মসজিদের সাধারণ মুসুল্লিদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন তিনি।
শিরিন নামে ভূক্তভোগী এক নারী বলেন, আবুল কাশেম মসজিদের নাম দিয়ে এলাকার মানুষের জমি দখলের চেষ্টায় আছেন। যে জমিগুলো মসজিদের নামে বলা হচ্ছে- সেগুলো মসজিদ বাড়ির বাসিন্দাদের। জমিতে কেউ কিছু করতে গেলেই আবুল কাশেম ও তার লোকজন বাঁধা দেয়। আমাদের জমিতে ঘর তুলতে গেলে সে বাঁধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। বার বার আমার স্বামী বদিউল আলমের নামে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছেন। ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে এলাকায় যা ইচ্ছে, তাই করছেন। আমরা তার এ অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
তবে এ বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, মসজিদের জমিতে ঘর তুলতে গেলে আমরা পৌরসভাতে অভিযোগ করি। সেখান থেকে লোক এসে কাজ বন্ধ রাখতে বলে। জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কেউ কিছু করতে পারবে না। সবকিছু আমাকে একাই দেখতে হয়। মুসুল্লিরা এসব বিষয়ে এগিয়ে আসে না।
এ ব্যাপারে মসজিদের সভাপতি ইফতিখার উদ্দিন ভূঁইয়াকে একাধিকবার মোবাইল ফোন করা হলেও তিনি সাড়া